আবদুর রহমান খান
পাকিস্তানের প্রখ্যাত সাংবাদিক আরশাদ শারিফকে গত ২২ অক্টোবর রাতে খুন করা হয়েছে আফ্রিকার দেশ কেনিয়ায়। পাকিস্তানের সাংবাদিক এবং বিরোধী রাজনৈতিক মহল দাবীকরছে, আরশাদ শারিফকে কেনিয়ায় হত্যা করা হলেও তার পরিকল্পনা করা হয়েছে পাকিস্তানে। এটা পুর্ব পরিকল্পিত হত্যাকান্ড।
পাকিস্তানের বর্তমান সরকার এবং দেশটির সেনাকর্মকর্তাদের কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত আরশাদ শারিফের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার একাধিক মামলা রুজু করে সরকার। তার অনলাইন টিভি’র সনদ বাতিল করে দেওয়া হয়। প্রাণ-নাশের হুমকীর মুখে দেশ ছেড়ে কিছুদিন দুবাই এবং পরে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবীতে অবস্থান করছিলেন। সেখানে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আরশাদ শরিফ।
কেনিয়া পুলিশ প্রথমে এটিকে ভুল করে গুলি করা হয়েছে বলে দাবী করলেও ময়না তদন্তে বেড়িয়ে আসে – আরশাদ শরিফকে গুলি করে হত্যা করার আগে তিন ঘন্টা ধরে নির্যাতন চালানো হয়েছিল। তার আঙ্গুলের নখ উপড়ে ফেলা হয়েছিল, হাতের এবং পাঁজড়ের হাড় ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছিল। কেনিয়ার মানবাধিকার সংস্থা ( কে এইচ আর সি ) সাংবাদিক আরশাদ শরিফের হত্যা কান্ডকে “সুপরিকল্পিত ” এবং “সু-সমন্বিত” বলে উল্লেখ করেছে। ঘটনার পরম্পরায় স্পষ্টভাবেই প্রামানিত হচ্ছে- এটি ছিল একটি কোল্ড ব্লাডেড মার্ডার (ঠান্ডা মাথায় খুন) ।
পাকিস্তান সরকার গঠিত তথ্য-অনুসন্ধান কমিটিও কেনিয়া ঘুরে এসে তাদের প্রতিবেদন গত বৃহস্পতিবার ( ০৮ ডিসেম্বর) সুপ্রীম কোর্টে জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরশাদ শরিফের হত্যাকান্ড ছিল পরিকল্পিত টারগেট কিলিং। এর সাথে পাকিস্তান,দুবাই এবং কেনীয়ার আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংশ্লিষ্টতা সন্দেহ করছে তথ্য-অনুসন্ধান কমিটি
তদন্ত করমকর্তারা আরো জানিয়েছেন, নাইরোবীতে মার্কিন দূতাবাসের ঠিকাদার পাকিতানী নাগরিক ওয়াকারের অতিথি হয়ে ছিলেন সাংবাদিক শরিফ । ওয়াকারের সাথে কেনীয়ার জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা, আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা এবং সেখানকার পুলিশের সাথে ঘনিষ্ঠতা ছিল। তাছাড়া , পাকিস্তানের রাজনীতীবিদ এবং আই এস আই-র সাথেও ওয়াকারের যোগাযোগ রয়েছে। এসব কারনে সাংবাদিক শরিফ হত্যায় আন্তঃদেশীয় যোগসূত্র উড়িয়ে দেওয়া যায়না।
এদিকে, পাকিস্তানের সুপ্রীম কোর্ট আরশাদ শারিফ হত্যার গুরুত্ব বিবেচনা করে ০৬ ডিসেম্বর স্বপ্রনোদিত হয়ে একটি যৌথ তদন্ত টীম গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতে দেশটির প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল বলেছেন, আদালত একটি সুষ্ঠ নিরপেক্ষ তদন্ত প্রতিবেদন চায়। তদন্ত কাজে কোনো প্রতিবন্ধকতা এলে তা আদালতকে জানাতে বলেছে সুপ্রীমকোর্ট। তছাড়া, প্রতি দু’সপ্তাহ পর পর আগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে তদন্ত টীমকে।
এর আগে কেনিয়ার পুলিশের অপরাধ বিষয়ে নজরদারী সংস্থা “আইপিওএ” এ ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে। সে প্রতিবেদন এখনো প্রকাশ পায়নি। ইসলামাবাদে কেনিয়ান হাই কমিশনার পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে, হত্যকান্ডের আলামত সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং তদন্ত চলছে।
এটা বিস্ময়ের ব্যপার, যে গত দেড় মাস চেষ্টা করেও পরিবারের পক্ষ থেকে এ হত্যাকান্ডের ব্যাপারে থানায় একটি এফ আই আর নথিভুক্ত করা যায়নি। অতঃপর গত ০৬ দিসেম্বর আদালতের নির্দেশ পাবার পর পুলিশের পক্ষ থেকে হত্যা এবং হত্যার উদ্দেশ্যে যোগসাজসের অভিযোগে একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। তবে নিহত সাংবাদিকের স্ত্রী জাভেরিয়া সিদ্দিক প্রশ্ন তুলেছেন, নিহত ব্যাক্তির পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ আমলে না নিয়ে কেনো পুলিশকে দিয়ে মামলা রুজু করা হলো? বিষয়টি নিয়ে আদালতে আলোচনার মাঝে নিহত সাংবাদিকের মা আদালতে একটি নালিশ দায়ের করেন। এতে উর্ধতন সামরিক কর্তৃপক্ষ, গোয়ন্দা সংস্থার কর্তা ব্যাক্তি এবং আই এস পি আর -কে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি আদালতে জানিয়েছেন, শরিফ ছিলেন একজন প্রখ্যাত সাংবাদিক। শরিফের হত্যাকান্ডের ব্যাপারে জনমনে ক্ষোভ ও সন্দেহ সৃষ্টি রয়ছে। এ বিষয় সকল তথ্য প্রকাশ্যে আনতে হবে। সাংবাদিকরা হচ্ছেন সত্য প্রাকশের কন্ঠস্বর । তারা সবার সামনে তথ্য তুলে ধরেন। তবে এ ক্ষেত্রে প্রধান বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে একজন মানুষের জীবন ও তার নিরাপত্তা।